২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কলিমুদ্দির বাসর [পর্ব-৩]

-

কলিমের মা ঘর থেকে বউয়ের কথা শোনেই হাউমাউ শব্দে বের হয়ে কলিমের ঘরের দিকে দৌড়াতে লাগল। কলিমের বউ পেছন থেকে শাশুড়ির আঁচল ধরে বলল, ‘শাশুড়ি আম্মা, ওই দিকে নয়, টয়লেট থেকে আপনার ছেলে বের হতে পারছে না।’
কলিমের মায়ের চেঁচামেচিতে বাড়ির সবাই জড়ো হতে লাগল। এ দিকে কলিমের মনে পড়ে গেল বড় ভাবী বলেছিল, আজ তাকে জিন-ভূতে আছর করতে পারে। কলিমের সারা শরীর ঘামতে লাগল। কলিম নিশ্চিত অনুভব করতে পারল, পা জোড়া কাঁপছে। হাতের দিকে তাকাল সে, হাত জোড়াও কাঁপছে। ছিটকানি ধরতে চাচ্ছে; কিন্তু হাতে শক্তি পাচ্ছে না। কলিম মনে মনে ভাবছে, ‘তাহলে কি আমাকে সত্যিই ভূতে ধরেছে!’
ভয়ে কলিমের সারা শরীর কাঁপতে লাগল। কলিম দম টেনে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে গগনবিদারী এক চিৎকার দিলো ‘আম্মা, আমাকে ভূতে ধরেছে।’
কলিম আরো কী যেন বলতে চাচ্ছিল; কিন্তু এবার কলিমের দাঁতে দাঁত খিল লেগে গেল। ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়ায় বাইরে সবাই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। অবশেষে দরজা ভেঙে কলিমকে উদ্ধার করা হলো। কলিমের জ্ঞান ফিরিয়ে আনতে আধা লিটার সরিষার তেল এবং এক কেজি রসুন পোড়া মাখতে হয়েছিল।
মধ্যরাতে কলিম ঘরে গেল। বউ বললÑ ‘তুমি খুব ক্লান্ত, আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি তুমি ঘুমাও।’
কলিম আলতো কণ্ঠে বলল, ‘তুমি শুবে না’?
বউ উত্তরে বলল, ‘তুমি আগে ঘুমাও তো’।
কলিম ভীষণ ক্লান্ত বিধায় কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের রাজ্যে চলে গেল।
এ দিকে কলিমের বড় ভাবী দেখল, নতুন বউ কলিমের মায়ের থাকার ঘর থেকে বের হয়ে দ্রুত বাড়ির বাইরের দিকে হাঁটছে। নতুন বউ কাছাকাছি আসামাত্র বড় ভাবী তার শাড়ির আঁচল ধরে বলল, ‘ও নতুন বউ, তুমি এত রাতে কোথায় যাও?’
কিন্তু একি! নতুন বউয়ের শাড়ি পুরোটাই তার হাতে চলে এলো। বড় ভাবীর চোখ কপালে উঠে এলো। নতুন বউ পরনের কাপড় ফেলে দৌড় দিলো ক্যান? তার ভাবনা মুহূর্তে টার্ন খাচ্ছে। নতুন বউ কি উলঙ্গ হয়ে দৌড় মারল? নতুন বউকে কি সত্যিই ভূতে ধরল? কিন্তু না, বিদ্যুতের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, তার পরনে লুঙ্গি আছে। তার মানে সে লুঙ্গির ওপর শাড়ি পরেছিল! হাতে বিশাল পুঁটলা নিয়ে সে দৌড়াচ্ছে। বড় বউয়ের বুঝতে বাকি রইল না যে, সে আসলে মেয়ে নয়, একটা ছেলে। সে কলিমের মাকে ডাকছে, ‘মা, আপনি কোথায়? সর্বনাশ হয়ে গেছে। দ্রুত আসেন।’
কলিমের মা রান্নাঘর থেকে দৌড়ে বের হওয়ার সময় পা ফসকে পড়ে ‘ওমাগো ওমাগো’ বলে চিৎকার শুরু করল। বড় বউ কলিমের মাকে ধরে উঠালেন, তার নিজ চোখে দেখা দৃশ্যগুলোর বর্ণনা দিলেন। কলিমের মা সব শোনে দ্রুত শোয়ার ঘরে গিয়ে দেখলেন আগের দিনের গরু বেচা টাকাগুলো নেই। তিনি ‘সর্বনাশ হয়েছে, সর্বনাশ হয়েছে’ বলে বিলাপ করতে করতে আলমারি খুললেন। স্বর্ণের গয়নাগুলোও খুঁজে পেলেন না। তার আর্তচিৎকারে বাড়ির সবাই জড়ো হয়ে গেল। তিন বউ কলিমের ঘরে প্রবেশ করল। কলিম কাঁচা ঘুম থেকে হইচই শোনে জেগে উঠেছে। সে ব্যালান্স হারিয়ে ফেলেছে। সে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল ভাবীদের দিকে। ঠোঁটে ঠোঁট কাটছে, চোখ মিটমিট করছে। মেঝো বউ বলল, ‘কলিমরে তুই কিছুই শুনিসনি?’
কলিম কোনো কথা বলছে না, শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কলিম কোনো কথা বলছে না দেখে ছোট বউ বলল, ‘ও ভাবী, কলিম তো টাস্কা খাইছে।’
বড় ভাবী ধমক দিয়ে বলল, ‘কলিম, তুই কথা বলছিস না ক্যান?’ কলিম ইশারা দিয়ে বোঝাতে চাচ্ছে যে, সব শোনে তার দাঁতে দাঁত খিল লেগে গেছে। কথা বলবে কিভাবে! [শেষ]


আরো সংবাদ



premium cement